কমলগঞ্জে চা-শ্রমিক সংঘের সভা অনুষ্ঠিত দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি এবং ২ টি উৎসব বোনাস প্রদানের দাবি

August 12, 2018,

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জে চা-শ্রমিক সংঘের এক সভা থেকে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা নির্ধারণ ও মাসিক মজুরির সমপরিমান হারে বছরে ২টি উৎসব বোনাস প্রদানের দাবি জানানো হয়। ১২ আগষ্ট রোববার বিকাল ৫টায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে চা-শ্রমিক সংঘের আহবায়ক রাজদেও কৈরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা থেকে এই দাবি জনানো হয়। সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস । এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন চা-শ্রমিক সংঘের নেতা স্যামুয়েল বেগম্যান, সুনছড়া চা-বাগানের প্রশান্ত কৈরী, রনজু নাইড়ু, শামুয়া উরাং, পুরণ কালিন্দি, বিশ্বজিত কর্মকার, হরিনারায়ন হাজরা, ডবল ছড়া চা-বাগানের নলিনী নায়েক, চাতলাপুর চা-বাগানের শ্যামল অলমিক, রাজনগর চা-বাগানের নারায়ন গোড়াইত, লংলা চা-বাগানের সন্যানী নাইড়–, সাতগাঁও চা-বাগানের  শিবানী নায়েক প্রমূখ।

সভায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির বাজারে দৈনিক মাত্র ৮৫ টাকা মজুরিতে একজন চা-শ্রমিককে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। চা-শ্রমিকদের বর্তমান মজুরির মেয়াদও ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার ১৯ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও মালিক ও সরকার কোন পক্ষই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে সরকার ও মালিক পক্ষ সমন্বিত হয়ে, এমন কি রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচন করলেও চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির নিরবতা পালন করে মালিকপক্ষের স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন। শুধু তাই নয় ২০১০ সালে চা-শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরি ঘোষিত হওয়ার ৮ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও সরকার নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করেনি। অথচ প্রচলিত নিয়ম ও শ্রমআইন অনুযায়ী নি¤œতম মজুরি ঘোষিত হওয়ার ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে সরকার নতুন মজুরি বোর্ড গঠন মজুরি বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।  সরকার মজুরি বোর্ড গঠনের কোন উদ্যোগ না নিয়ে কেন ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচনে এত আগ্রহী? তাই স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে চা-শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় এই নির্বাচনের ভূমিকা কি আর নির্বাচনের নামে যারা ক্ষমতাশীন হলেন তারাই বা কতটুকু শ্রমিকস্বার্থে ভূমিকা নিবেন? নাকি মালিকদের স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনে সরকার, মালিকপক্ষ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের দালালনেতারা সমন্বিত হয়ে এই তথাকথিত নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন? এর আগেও  ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে আরও দুইবার একই পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু চা-শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে কতটুকু! বক্তারা চা-শিল্পে শ্রমআইন বাস্তবায়ন না হওয়া ও বৈষ্যমের কথা তুলে ধরে বলেন শ্রমআইনে সকল শ্রমিক নিযোগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিসবুক প্রদান বাধ্যতামূলক হলেও লক্ষাধিক চা-শ্রমিককে তা প্রদান করা হয়নি। শুধু তাই নয় মালিকপক্ষ চুক্তি করলেও চা-শ্রমিকদের গ্রাচুয়েটি চুক্তি হতে বেআইনীভাবে বঞ্চিত করে চলেছেন। আর শ্রমিকপক্ষের দালালনেতারা, যারা চুক্তি করেছিলেন তারাও মালিকপক্ষের চুক্তি লঙ্ঘন করার প্রেক্ষিতে নিরবতা পালন করে মালিকপক্ষের স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন। শ্রমআইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদান বাধ্যতামূলক করা হলেও দেড়শ বছরের বেশি সময় চা-শ্রমিকদের ছুটির দিনের মজুরি হতে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৫ সালে চা-শ্রমিক সংঘের সাংগঠনিক ও আইনীগত ভুমিকার কারণে ছুটির দিনের মজুরি আদায় করা সম্ভব হলেও দালালনেতারা চুক্তিতে বেআইনী শর্ত যুক্ত করে মালিকের  স্বার্থ রক্ষা করে। বর্তমানে শ্রমআইনে প্রতি ১৮ দিন কাজে একদিন অর্জিত ছুটি প্রাপ্য হলেও চা-শ্রমিকদের জন্য ২২ দিন কাজে ১ দিন অর্জিত ছুটির করে বৈষম্য করা হয়েছে। তার উপর সরকারে সাম্প্রতিক শ্রমআইন সংশোধনের উদ্যোগে মালিকপক্ষ চা-শ্রমিকদের গ্রাচুয়েটি সুবিধা শ্রমআইন থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেছেন।

বক্তারা বর্তমান শ্রম আইনের ২৬ ধারাসহ শ্রমিক স্বার্থবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল ও সকল বৈষম্য নিরসন করে আইএলও কনভেশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদান করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়নের দাবি জানান। প্রতিবেশী দেশ গুলোতে চা-শ্রমিকদের মজুরি, রেশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও আমাদের থেকে অনেক বেশি হলে দালাল নেতৃত্বের কারণে আমাদের দেশে কার্যকর চা-শ্রমিক আন্দোলন গড়ে না উঠার কারণে আজও চা-শ্রমিকের জীবন ‘দাস’ এর সমতুল্য। তাই চা-শ্রমিকদের দালালদের খপ্পর হতে মুক্ত হয়ে সৎ, সংগ্রামী, আপোসহীন, শ্রেণিসচেতন নেতৃত্বে সংগঠন-সংগ্রাম গড়ে তুলে দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে।

সভায় রাজদেও কৈরীকে আহবায়ক এবং শ্যামল অলমিক ও হরিনারায়ন হাজরাকে যুগ্ম আহবায়ক করে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি পূণঃগঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন সুনীল কর, প্রশান্তু কৈরী, সন্যাসী নাইড়–, দেওরাজ রবিদাস, নারায়ন গোড়াইত, রনজু নাইড়– ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com