কমলগঞ্জে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা শুরু

April 14, 2019,

আশরাফ আলী॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা শুরু হয়েছে।

রবিবার ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এ চড়ক পূজা ও মেলা শেষ হবে সোমবার বিকেলে। দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জের ছয়চিরিসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ঐতিহ্যবাহী এই চড়ক উৎসব দেখতে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের লোকের সমাগম হয়েছে।

প্রাচীন ঐতিহ্য লালিত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে পুঞ্জিকা মতে প্রতিবছরের চৈত্র সংক্রান্তিতে দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চড়ক পূজা উৎসব। পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর বসে বিরাট মেলা।

জানা যায়, চড়ক পূজা উৎসবের ১০/১২ দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীর মধ্যে ৪০/৫০ জন সন্ন্যাসী ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরী সহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশ নেন। এ ক’দিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস  ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার ২ দিন পূর্বে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে ঢাকের বাজনায় সরগরম করে গোটা এলাকা।

রবিবার দুপুর থেকে নারী পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম ঘটে। রবিবার বিকেল থেকে ভক্তরা মন্ডলীতে বিশাল দা (বলিছেদ) দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয়। নৃত্য শেষে ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘীতে স্নান করে ভক্তদেরকে লোহার শিকড় শরীরের বিভিন্ন অংশে পিষ্ট (গাঁথা) করা হয়। বিশেষ করে জিহ্নবা ও গলায় গেঁথে দেয়া হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের (জ্যান্ত মানুষের) পিঠে লোহার দু’টি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। এ সময়ে দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা উপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুঁড়িয়ে নেন।

এদিকে চড়ক পূজা উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন রকমারি জিনিসপত্রের সয়লাব থাকে। যুগ যুগ ধরে এ চড়ক উৎসব এ অঞ্চলের হিন্দুদের বেশ নাড়া দিয়ে আসছে। বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দু’দিন ও ১লা বৈশাখ বসে মেলা। শেষ চৈত্রের গোধুলীলগ্নে চড়ক গাছ মাটিতে পুঁতে ঘোরানো হয়। এর আগে ভক্ত ও পূজারীরা চড়ক গাছে ফুল, দুধ ও চিনি দিয়ে পূজা দেয়।

শংকর বৈদ্য নামের একজন ভক্ত বলেন, আমার পূর্ব পুরুষ থেকে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পূর্ব পুরুষদের দেখাদেখি আমরা এ পূজার ভক্ত।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com