কেন বনবিভাগের গুলি এবং কিভাবে রক্ষা পেলাম
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ইসলামপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল কুরমা বনবিটের হামহাম জলপ্রপাতে যায়োর পথে বন বিটের কর্মচালেিদর গুলি থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে প্রাণ ফিরে পেলাম। নেপথ্যে ছিল বনবিভাগের সহায়তায় গাছ চুরির ছবি ধারন।
কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা বনবিট এলাকার দূর্গম পাহাড়ি এলাকার নয়নাভিরাম জলপ্রপাত হামহাম এর নিউজ সংগ্রহের জন্য যেতে ১৩ সেপ্টেম্বর বুধবার কুরমা বন বিট কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে বৃহস্পতিবার সেখানে যাবার জন্য বলি। ফোন দেয়ার ঘন্টা খানেকের মধ্যে ওই এলাকার কিছু পাবলিক ফোন করে সেখানে কেন যাব জানতে চান। এবিষয়টি কোথা থেকে জেনেছেন জানতে চাইলে বলেন সেখানকার বিট অফিসার বলেছেন। ভয়ে ওই দিন হামহামে না গিয়ে শ্রক্রবার সকালে সুমন মিয়া (৩৮) এবং ফরিদ মিয়া(১৫) কে নিয়ে রওয়ানা দেই। যাবার সময় আমার মোটর বাইকটি কলাবন এলাকার ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের চার জন বনরক্ষীর বসবাস এর জায়গায় তাদের ভাষায় ক্যাম্প এ রেখে যাই।
ক্যাম্প থেকে রওয়ানা দিয়ে হামহাম যাবার অর্ধেক পথ যেতে না যেতেই রাস্তার দু’পাশে গাছ ও বাঁশ কাটার শব্দ শুনে আগ্রহ জাগে হয়তো কেহ কাছ চুরি করছে। কিছু দূর গিয়ে ডানদিকে লোকের ছোট একটি যাতায়াতের সরু পথ দেখে সাথের দু’জনকে রেখেই ভিতরে প্রবেশ করি। ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পাই অনেক বড় বড় সেগুন কাঠ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছু মোথা ও গাছের সামনা বাঁশের পাতা দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে। এগুলোর ছবি তোলে বাহিরে বের হয়ে আসবো এসময় খুব জোরে চিৎকার শুনে বাহিরে এসে দেখি আমার সাথের দু’জনকে খুব জোরে জোরে বনবিভাগের লোকজন ধমকাচ্ছে। এক পর্যায়ে কিছু বুঝে না উঠার পূর্বেই এক রাউন্ড ফাঁকাগুলি হয় এবং আমার সাথের দু’জনকে তাড়াতে থাকে। প্রাণভয়ে তারা পালানোর পরই বন বিভাগের এক কর্মী উচ্চ স্বরে তাকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং অন্যজনকে বলে আমার হার্ট বরাবর গুলি করতে। তখন বন্ধুক হাতে থাকা লোকটি সামান্য দাঁড়িওয়ালা এক বন কর্মীর হাত থেকে গুলি এনে বন্ধুকে লোড করে আমার দিকে তেড়ে আসে। এসময় আমি প্রাণ ভয়ে অর্ডার দেয়া লোকটির পায়ে শুয়ে পড়ে আমাকে না মারতে মিনতি করতে থাকি। তকনো তার চিৎকার থামছিলো না। এসময় তারা সবাই আমার উপর চড়াও হয়ে আমার কাছে থাকা সিএসএলআর ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে। এসময় চিৎকার করা লোকটি বলে ভিতরে ঢুকে ছবি তোল্লেন কেন, তুমি হামহাম দেখতে এসেছো নাকি আমাদের বাঁশ দিতে এসেছো। দস্তাদস্তির একপয়ায়ে কৌশলে আমি ক্যামেরার মেমোরি কার্ডটি খুলে সেইভ করি। এক পর্যায়ে ওই লোকটা ভিট অফিসারকে ফোন করে বলে স্যার অল্পের জন্য বেঁচে গেছে,আপনি অর্ডার দিলে এখানেই শেষ করে লাশ ফেলে দেব। ওই সময় বিট অফিসারের সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালা গালি করে এবং ফোনে হাত দিলে গুলি করে লাশ এমন জায়গায় ফেলবে যেখানে লাশও পাওয়া যাবেনা বলে চিৎকার করে। প্রাণ ভয়ে কোনও রকমে তাদের ম্যানেজ করেন। তারা চারজন তাকে পাহারা দিয়ে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে এবং ওই সময় করজোড়ে মিনতি করে বলি ভাই আমি যে চবিটা তুলেছি সেটা কেটে দিয়ে আমার ক্যামেরাটা দিয়ে দেন। একপর্যায়ে বনবিট কর্মকর্তার সাথে ওই লোকটি কথা বলে এবং কি বুঝে আমার ক্যামেরাটা ফেরৎ দেয়।
কুরমা বনবিটে বিট অফিসারসহ ৬জন লোক কাজ করে। তারা হলো জহিরুল ইসলাম বিট কর্মকর্তা, হাবিবুর রহমান এটাচ, হুমায়ুন কবির,শামছুল হক,আশরাফ,আব্দুল জলিল এবং জাকারিয়া।
ওই সময় সিআরপি মৌলভীবাজারের একটি দল হামহাম যাচ্ছিল,তারাও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনতে পেয়েছে,তখন বন কর্মচারীরা আমাকে পাহারা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসছিল।
ক্যাম্পে এসে আমি সাইকেল নিয়ে চলে আসতে চাইলে আমাকে আসতে না দিয়ে বলে যে তাদের বস আসার পরেই সিন্দান্ত হবে কি হবে। এক পর্যায়ে তাদের বস বিট কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ক্যাম্পে এসে ছবি তোলার ব্যাপারে আমাকে অনেক শাসান এবং বলেন তিনিই একমাত্র সিলেটি বিট কর্মকর্তা তার পিতাও বিট কর্মকর্তা থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা হয়েছেন। তিনি আমাকে এলাকার অনেক লোকের কথা বলেন যাদের সাথে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তিনি এও বলেন তার ১৬ মাসের সময়ে এখানে কোনও গাছ কাটা হয়নি। অথচ প্রমাণ যাতে না হয় সেজন্য আমাকে তিনি প্রাণে মারাতে চেয়েছিলেন। তিনি কোন সাংবাদিকদের ৫ হাজার টাকা করে মাসোহারা দেন তাও হুমকি দিয়ে বলেন। বন বিভাগের উদ্দোর্তন কর্মকর্তারা ওই এলাকা অন্যান্য প্রশানের লোক নিয়ে তদন্ত করলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।
নাম না বলার শর্তে অনেকেই বলেন বর্তমান ভিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় কুরমা বনবিটের সেগুন ও বাঁশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
বিগত কিছুদিন পূর্বে কুরমা বনবিটের কার্যালযে গেলে সেখানে একটি বানর জিঞ্জির দিয়ে বাঁধা দেখতে পেয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এএফএম মনিরুল ইসলামকে জানালে সেটা ছেড়ে দেয়া হয় এবিষয়ে আমার উপর ক্ষেপে আছেন বলে জানাগেছে। আর তা থেকেই আজকের এঘটনা।
বনবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন তাদেরকে না জানিয়ে সেখানে যাওয়াতে এমন হয়েছে বা পাশে ঢুকাতে গাছ চোর মনে হয়েছে। অথচ আমার মোটর বাইক বন বিটের ক্যাম্পে রেখে যাওয়া কি প্রমাণ করেনা তাদের বলে যাইনি,বা আমাকে চিনেনা বা আমার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে লাঞ্চিত করে হামহাম যেতে না দিয়ে দুই রাউন্ড গুলিকরে ফিরিয়ে আনা কি প্রমাণ করেনা তাদের চুরির সাথে সম্পর্কের কথা। যে লোকটা সবচেয়ে বেশী টর্চার করে এবং গুলি করতে বলে সে ক্যাম্পে সাইকেল রেখে যাবার সময় আামাকে সালামও দেয়। তার পরও ওই কর্মকর্তা কি করে বলেন বলে যাওয়া হয়নি।
পরে বিট কর্মকর্তা ফোন করে ভুল হয়ে গেছে বলে আমার সাথে মাফ চাওয়ার কথা বলা কি প্রমাণ করেনা তার দূর্বলতার কথা। তিনি আমার সাথে শেষ করতে লোকও পাঠান। কিন্তু আমি বলি এটা আমার অফিসের বিষয় আমার না।
বনবিভাগকে বন্ধুক দেয়া হয়েছে সেটা গাছ চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। অথচ আজ সেটা একজন সংবাদকর্মীর উপরে উঠলো।
এব্যাপারে কমলগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরী(জিডি) করা হয়েছে। যার নাম্বার ৭২১,তাং-১৫ সেপ্টেম্বর’১৭।
সিলেটের বিভাগীয় বনকর্মকর্তার কথায় শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয়ে সহকারী বন সংরক্ষক(এসিএফ) মনিষ চাকমার সাথে দেখা করলে তিনি আমার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনেন এবং বলেন তিনিও খোঁজ নিয়ে গুলি করার সত্যতা পেয়েছেন। তিনি বলেন এব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এবিষয়ে আর কোনও খবর প্রচার না করতেও অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তাকে ফোন করে বলেছেন আমার সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং তাকে এবিষয়ে তদন্ত করতে কথা বলা সত্বেও জিডি এবং নিউজ হওয়াতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মন্তব্য করুন