জুড়ীতে প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে ঠেলাগাড়ী চালক আব্দুর রহমানের মানবেতর জীবন যাপন একজনেরও ভাগ্যে জুটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা !
বড়লেখা প্রতিনিধি॥ জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের ঠেলাগাড়ি চালক আব্দুর রহমান (৫৬)। স্ত্রী, ৭ ছেলে-মেয়ের ৩ জনই প্রতিবন্ধী। দুর্ভাগ্যই যেন দরিদ্র আব্দুর রহমানের জীবনসঙ্গী। ৩ প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও একজনেরও ভাগ্যে জুটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা।
জানা গেছে, আমতৈল গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুর রহমান রেলওয়ের লীজকৃত জায়গায় মাটির ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। ২০ বছর বয়সে তার শরীরে এক ধরনের গুটি বের হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে সমগ্র শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে গুটি বের হয়নি। গুটিগুলোতে কোন জ্বালা যন্ত্রণা না থাকলেও দেখতে দৃষ্টিকটু হওয়ায় অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলেন। টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত পা বেঁকে যাওয়া সুরমা বেগমকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন গুটি রোগি আব্দুর রহমান। সংসারে নতুন মুখের আগমন ঘটতে থাকলে তাদেও খাবার দাবারের যোগান দিতে সুরম বেগম মানুষের বাড়ীতে কাজ করতেন। কিন্তু পায়ের ব্যথার কারনে এখর আর অন্যের বাড়িতে ঝিয়েল কাজ করতে পারেন না। দুই মেয়েকে পাত্রস্থ করলেও খিচুনি রোগে আক্রান্ত ছোট মেয়ে হালিমা বেগম (৯) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। একইভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত বড় ছেলে শামীম (২৫)। তাই ঠেলাগাড়ি চালিয়ে পরিবার চালাতে হয়েছে। তবে ৪/৫ বছর আগে পড়ে গিয়ে আব্দুর রহমানের দু’টি হাতই ভেঙ্গে গেলে চোখে অন্ধকার নেমে আসে। দারিদ্রতার কারনে এই তিন প্রতিবন্ধীর কারো এমনকি নিজের চিকিৎসা করানোর সুযোগ হয়নি। শত অনটন উপেক্ষা করে দ্বিতীয় পুত্র শাহীন (১৮) কে গাড়ী মেকানিক্সের কাজ শিখিয়ে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভোগ্যের যাতনা একধাপ বাড়িয়ে রোজগারী হয়েই মা-বাবাকে ছেড়ে চলে যায় স্বার্থপর ছেলে শাহীন। তৃতীয় পুত্র সেলিম (১৬) শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী মাঝে মধ্যে বাবাকে ঠেলাগাড়ি চালনায় সহযোগিতা করে। ছোট ছেলে আল আমিন (১১) মাদ্রাসায় পড়ছে। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইন ঘেষা লীজের সামান্য জায়গায় মাটির ঘরে আব্দুর রহমানের বসবাস। যে ঘরের বাহিরে ভিতরে সমানভাবে বৃষ্টি পড়ে। দীর্ঘ ষোল বছর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি এ সেকশনে পুনর্বাসন কাজ শুরু হওয়ায় তিনি এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে ভোগছেন। এ এলাকায় বহু খাস জমি প্রভাবশালীদের দখলে থাকলেও ভূমিহীন আব্দুর রহমানের ভাগ্যে সামান্য মাথা গোঁজার ঠাঁই জুটেনি। বন্যা কেন্দ্রিক ভিজিএফের ত্রিশ কেজি চাল ও পাঁচশ টাকা ছাড়া সরকারী সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত আব্দুর রহমানের প্রতিবন্ধী পরিবার। সরকার প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করলেও আব্দুর রহমানের ৩ প্রতিবন্ধী সন্তানের একজনেরও ভাগ্যে জুটেনি সে ভাতা। এ বয়সে শারীরিক সমস্যা নিয়ে ঠেলাগাড়ীর বোঝা টানা কষ্টকর হলেও পেটের দায়ে তা করতে হচ্ছে। দিনে দুই/আড়াইশ টাকা রোজগার হলেও তা দিয়ে সংসারের ভরণ পোষণ যেখানে অসাধ্য সেখানে এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি যেন গোদের উপর বিষফোড়া।
এব্যাপারে পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত দাশ জানান, আব্দুর রহমানের পরিবার সম্পর্কে আমি অবগত আছি। অচিরেই তার পরিবারের একজনতে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করব।
মন্তব্য করুন