নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এলপি দোকান!

March 31, 2019,

আব্দুল কাইয়ুম॥ মৌলভীবাজারে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বাসা বাড়ি কিংবা হোটেল রেস্তোরাঁয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহারের চাহিদা। আর এসব চাহিদাকে পুঁজি করে শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান। সম্প্রতি দেশের নানা প্রান্তে এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।
জানা যায় খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই ১০টির বেশি সিলিন্ডার না রাখার বিধান থাকলেও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাইসেন্সবিহীন এসব দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি। কোন প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছে শহর ও আশপাশের এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসা। মৌলভীবাজার শহরে এলপি গ্যাসের ৬-৭টি ডিলার থাকলেও খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা শতাধিক হবে।
প্রকাশ্যে দিনের আলোয় প্রশাসনের নাকের ডগায় শহরের সড়কের পাশে গড়ে উঠা এসব দোকানে গ্যাস বিক্রির ফলে আশঙ্কা রয়েছে বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির। এলপিজি গ্যাস কোম্পানি গুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার মজুদ আইন অনুসরণ করছে না। মৌলভীবাজারের খুচরা এলপিজি গ্যাস বিক্রয়কারী অধিকাংশ দোকান গুলোতেই নেই প্রাথমিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় ড্রাই পাউডার, বালু ও কার্বনডাই অক্সাইডসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। শহরের সবগুলো খুচরা দোকানেই দেখা যায় যেখানে থাকার কথা ৮-১০টি সিলিন্ডার সেখানে এসব দোখানে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির অসংখ্য সিলিন্ডারের স্থুপ।
সূত্রে জানা যায় বিস্ফোরক আইন ১৯৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স ব্যতীত কোন ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে না। এছাড়াও আটটি গ্যাসপূর্ণ মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১নং ধারায় বলা হয়েছে আগুন নেভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুদগারে যথেষ্ট পরিমানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। এ আইন অমান্য করলে যেকোন ব্যবসায়ী ২বছর ও অনাধিক পাঁচবছরের জেলসহ ৫০হাজার টাকায় দ-িত হবেন। এবং অর্থ অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত আরো ৬মাস পর্যন্ত কারাগারে থাকার বিধান রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান খুলতে প্রথমেই নিতে হয় বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। কিন্তু মৌলভীবাজারে দেখা গেছে তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। এখানে মুদি দোকান থেকে শুরু করে চা দেকান ও হার্ডওয়্যারের দোকানেও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় এলপিজি সিলিন্ডার।
মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন সড়কে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কোনরূপ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস। সিলিন্ডার ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বাসা বাড়ি কিংবা হোটেল রেস্তোরাঁয় গ্যাস ব্যবহার করছেন। অনেকেই এলপিজি গ্যাস ব্যবহারের নিয়ম না মেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রয়োজনীয় রান্নাবান্নার কাজ চালাচ্ছেন। এতে করে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। মৌলভীবাজার শহরের খুচরা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান গুলোতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভুক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কতৃক অভিযান চালালেও এসবের তোয়াক্কা করছেন না অবৈধ সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায় অমেরা, বসুন্ধরা, টোটাল,পদ্মা,যমুনা, জামাই,অরিয়ন, লাফাজসহ বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানির প্রস্তুতকৃত সিলিন্ডারের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা যায় অনেক কোম্পানির সিলিন্ডারের গায়েই উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পাওয়া যায়নি।
শহরের কুসুমবাগ পেট্রোল পাম্পের সামনে অবস্থিত পদ্মা এলপি সিলিন্ডার কোম্পানির ডিলার মেসার্স আখন্দ এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী মোঃ ওয়াজেদ আখন্দ ডিলার হিসেবে বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রের কাগজ এই প্রতিবেদককে দেখিয়ে জানান সব দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করছি তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই নিয়ম মানছেন না। তিনি বলেন প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে দিন দিন অবৈধভাবে এলপি সিলিন্ডার বিক্রি বাড়ছে।
মৌলভীবাজার শহরের প্রবেশপথ ওয়াপদা সড়কের সামনে অবস্থিত মেসার্স আমির এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায় বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোন প্রকার নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার। এই দোকানের সত্বাধিকারী মোঃ আমির হোসেন জানান তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লাইসেন্স নিয়ে সিলিন্ডার ব্যবসা করছেন। খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়না জানিয়ে আমির হোসেন বলেন ডিলারদের প্রয়োজন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স।
এবিষয়ে জানতে মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক মুজিবুর রহমান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়, সেক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়। তিনি বলেন যদি এসব নিয়ম কেউ না মানেন তাহলে আমরা মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ব্যবস্থা নেবো।
ভুক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোঃ আল আমিন বলেন খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো ১০টার বেশি এলপিজি সিলিন্ডার রাখা যাবেনা, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব নিয়ম খুচরা ব্যবসায়ীরা মানেন না। তিনি বলেন আমরা এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো যাতে করে তারা এসব ব্যবসার ক্ষেত্রে আইনের সব নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যবসা করতে পারেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com