রাজনগরে শাহজাহান খানের জয়ের নেপথ্যে কী “কাপপিরিচ”?
স্টাফ রিপোর্টার॥ সবে আসলেন লন্ডন থেকে। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেন উপজেলা নির্বাচনে। বিপুল ভোটে জয়ী হলেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ও আরোও দুই বিদ্রোহী প্রার্থী হার মানলেন তার কাছে। এমন চমক আশা করেনি রাজনগরীরা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম পরিবর্তন। তাক লাগিয়ে চেয়ারম্যান হলেন শাহজাহান খান। তার এই জয়ের নেপথ্যে কী? এই প্রশ্ন এখন সবার।
ভোটার ও বিশ্লেষকরা বলছেন- শাহজাহান খান রাজনগরের সাধারণ মানুষসহ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বড় একটি অংশের ভোট পেয়েছেন। বিশেষ করে গত উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী আব্দুল মান্নান “কাপপিরিচ” প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। এবার সেই প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ের মুখ দেখেছেন শাহজাহান।
নির্বাচন পরবর্তী পর্যালোচনা অনুসন্ধান করলে জানা যায়, রাজনগরে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আছকির খান এবং দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মিছবাহুদ্দোজা ভেলাই এর নিজস্ব ভোট ব্যাংকও রয়েছে। ভোটের মাঠে শাহজাহান খান নবীন হলেও ভোটরাদের কাছে তার বেশ জনপ্রিয়তা তৈরী হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপি ও জামায়াতের বড় একটি ভোট কোথায় গেল? নিশ্চই শাহজাহান খানের ভাগে। ওই অংশের ভোট আছকির কিংবা ভেলাইয়ের ভাগে পরার কোনও চান্সই নেই। কারণ তারা ঘুর বিরোধী। এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা হওয়ায় পেয়েছেন আ.লীগের ভোটের একটি অংশও তিনি পেয়েছেন শাহজাহান। তাই এমন চমক লাগানো জয়। স্থানীয় আ.লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের অনেক দায়িত্বশীল নেতা সূত্রে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তাদের মতে, রাগনগরের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে আছকির ও ভেলাই এর হাতে জিম্মি ছিল উপজেলা পরিষদ। এবার এই পরিবর্তনের লক্ষেই তারা একজন সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদকে নির্বাচিত করেছেন। তারা পরোক্ষভাবে শাহাজাহান খানকে সমর্থন দিয়েছেন। অনেক সংস্কারপন্থী গেল বারের মান্নানের কাপপিরিচের ভোট, এবারের শাহাজাহানকে দিয়েছেন। যার কারণেই ভোটের আগ থেকেই তার পক্ষে জন¯্রােত তৈরী হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় জামায়াত নেতা জানান, বিগত দুই নির্বাচনে আমরা প্রার্থী ছিলেন আব্দুল মান্নান। উনার মার্কা ছিল কাপ পিরিছ। উনার নিজস্ব একটা ভোট ব্যাংক ও আমাদের দলীয় বিরাট ভোট ব্যাংক আছে। এছাড়া এবার আমাদেরও নির্বাচনী প্রস্তুুতিও ছিল। যেহেতু কেন্দ্র নির্বাচনে যায়নি বিধায় আমরাও নির্বাচনে যাইনি। যদি আমাদের কোন ভোটার যায় এটা তার নিজস্ব চিন্তায় যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। তার একান্ত ব্যাক্তি স্বাধীনতায় আঘাত করার অধিকার আমাদের নেই।
এবার উপজেলা নির্বাচনে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আছকির খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিছবাহুদ্দোজা ভেলাই (আনারস), সাবেক ছাত্রনেতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহজাহান খান (কাপ পিরিছ), সাবেক চেয়ারম্যান সাতির মিয়া (দোয়াত কলম), স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মতিন (মোটরসাইকেল)। ২৭,৩৭৬টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন শাহজাহান খান।
এবিষয়ে রাজনগর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহজাহান খান সিলেটভিউকে বলেন, আমি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হওয়ায় আওয়ামীলীগের একটা অংশের ভোট পেয়েছি। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আমজনতার ভোটও পেয়েছি। বিশেষ করে তরুণ সমাজ আমকে সমর্থন করেছে। তাদের কথা না বললেই না হয়।
তিনি আরোও বলেন, দীর্ঘদিন রাজনগরবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল। তারা পরিবর্তন চেয়েছিল। তাই তারা আমাকে বিপুল ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমি রাজনগরকে একটা মডেল উপজেলায় গড়তে চাই। সেই লক্ষ্যেই সবার সহযোগীতায় রাজনগরের উন্নয়ন করে যাব।
মন্তব্য করুন