সঙ্গীত প্রতিভা শিউলি খন্দকারের ইচ্ছে বড় শিল্পী হওয়া
দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বহু প্রতিভাবান শিল্পী, সুরকার ও সাহিত্যিক। কিন্তু সুযোগের অভাবে সম্ভাবনাময় অনেক প্রতিভার অপমৃত্যু ঘটছে হর হামেশা। প্রতিভার যথাযথ মূল্যায়ন বর্তমানে অনুপস্থিত। এমনই এক প্রতিভা সম্পন্ন কন্ঠশিল্পী শিউলী খন্দকার। তার সুরের মাধুরীতে রাজনগর তথা বৃহত্তর সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গন মুখরিত। তার গানের কন্ঠ হৃদয়স্পর্শী, সঙ্গীতের প্রায় সবগুলো শাখায় তার অবাধ বিচরণ। আধুনিক, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, পল্লীগীতি, দেশাত্ববোধক গান সহ সকল বিষয়ে তার দখল রয়েছে। কিন্তু বাউল গানকে প্রাধান্য দিয়ে বাউল শিল্পী হিসেবেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার কাশিনাথ রোডের সৈয়ারপুর বাসায় ১৯৯৬ইং সালের ৫ই জানুয়ারী শিউলির জন্ম হয়। পিতা জসিম উদ্দিন একজন স্যানেটারী মিস্ত্রী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়াকালীন সময় থেকেই বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় তার সঙ্গীত চর্চার পথকে প্রশস্ত করেছে। এবং তাদের উৎসাহে শিউলিকে এতোদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। চমৎকার কন্ঠের জন্য শিউলি এ পর্যন্ত বহু সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক পুরষ্কার সামগ্রী ও প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মৌলভীবাজার আলী আমজদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামদ, নাথ, গজলসহ দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে জাতীয় শিশু পুরষ্কার প্রতিযোগিতায় ১ম এবং ২য় স্থান লাভ করে। গানের প্রতি আগ্রহ দেখে তার পিতা মাতা তাকে ২০০৫ সালে মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমিতে গানের চর্চার জন্য ভর্তি করেন। ২০০৬ সালে সিলেট এর বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমের স্মরণে মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমিতে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে শিউলি দর্শকশ্রোতা সহ অতিথি বৃন্দের মন জয় করে প্রথম স্থান দখল করার গৌরব অর্জন করে। তার গানে মুগ্ধ, বিমোহিত হয়ে প্রধান অতিথি তৎকালীন জেলা প্রশাসক মহোদয় তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন এবং তার লেখাপড়া সহ সংগীত চর্চার যাবতীয় খরচের দায় ভার গ্রহণ করেন। ২০০৭ সাল থেকে বাউল রানু সরকারের নিকট থেকে বাউল গানের প্রশিক্ষণ নেন এবং আজ অবদি ওস্তাদ রানু সরকারের নিকট থেকে বাউল গানের দীক্ষা নিচ্ছেন (প্রশিক্ষণ)।
২০০৯ সালে মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের সাথে প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়াও (NTV) চ্যানেলে আয়োজনকৃত Close Up-1 ও Channel I ও চ্যানেলে আয়োজনকৃত “ক্ষুদে গান রাজ” অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। গান গেয়ে গানের মাধ্যমে মানুষের মনে আনন্দ দান, একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হওয়াই তার জীবনের ব্রত। রাজনগর উপজেলা তথা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় সংগীতা অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিয়ে সে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন বাউল গানের আসরে তার সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। এক প্রশ্নের জবাবে বাউল শিউলি খন্দকার বলে, শিল্প আমার অস্তিত্ব, আমার প্রেম, শিল্পী আমার স্বজন, আমার ভালোলাগার ভালোবাসা, শৈল্পিক স্বাজাত্য আমার প্রশান্তির প্রণয়ের প্রগাঢ় নিকুঞ্জ। আমি শিল্পের জন্য শিল্পী হতে চাই। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শিউলি সকলের বড়। সংসারে অভাবের তাড়নায় মৌলভীবাজার আলী আমজদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ চুটিয়ে গানকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন শিউলি খন্দকার। সে একজন বড় শিল্পী হতে চায়। কিন্তু সুযোগ হবে কি কখনো। মফস্বলের শিল্পীরা চিরদিনই অবহেলিত। সে বলে আমাদের খোঁজ খবর কেউ রাখেনা, পরিচর্চা গুনে যেমন একটি বাগান ফুলে-ফলে সৌন্দর্য মন্ডিত হয়ে ফুটে উঠে, শিল্পীর তুলির আছড়ে জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠে এক একটি চিত্র। ঠিক তেমনি পূর্ণ মন্ত্র ও অফুরন্ত অনুপ্রেরণা সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করে। কারণ উচ্চ শিক্ষিত কিংবা গুণিজন হয়ে কেউ জন্মে না। অনুকুল পরিবেশে সুশিক্ষা গ্রহণের ফলশ্রুতিতেই সমাজে গুণীজনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বর্তমানে শিউলি খন্দকার রাজনগর উপজেলার তেলিজুরী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। উচু নীচু প্রাকৃতিক পাহাড় জঙ্গলের ছায়া ঘেরা টিলার উপরে একটি কুড়েঘরে তার বাস। যেখানে আজো বিদ্যুতের আলো পৌছেনি। সম্প্রতি এক মনোরম সন্ধ্যায় তার নিজ বাড়ীতে একান্ত আলাপ চারিতায় জানা যায় ২০১৩ সালের ২৩জুন রাজনগর উপজেলার তেলিজুরী গ্রামের সংগীত শিল্পী হাকিম মিনাজের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরিণয় সূত্রে এখন তিনি রাজনগর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। স্বামী শিল্পী হাকিম মিনাজকে নিয়ে ছোট কুটিরে সুখের সংসার করছেন। স্বামীর উৎসাহ উদ্দীপনায় গানকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। গানের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দান করা এবং একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাই তার জীবনের ব্রত। তাহার প্রিয় শিল্পী গীতিকার ও সুরকার সিলেটের কৃতিসন্তান মরহুম বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম বলে জানান। শিউলি খন্দকার আরো বলেন, খুবই দুঃখের বিষয় শহর অঞ্চলের শিল্পীরাই বিভিন্নভাবে সরকারের দৃষ্টিতে পরে নানা সাহায্য সহযোগিতার মধ্য দিয়ে নিজেকে বিকাশ করতে পারে। এবং সহজেই প্রতিষ্ঠিত শিল্পী বলে পরিচিত হতে পারে। পরিশেষে তিনি দর্শক শ্রোতা ও দেশবাসীর দোয়া ও আর্শীবাদ কামনা করেন।
মন্তব্য করুন