হাকালুকির বিল থেকে অবৈধভাবে মাছ লুটের ধরণ পাল্টেছে লুটেরা বাহিনী
বড়লেখা প্রতিনিধি॥ হাকালুকি হাওরের ইজারাবিহীন গুটাউরা হাওরখাল বদ্ধ জলমহালে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের পর মাছ লুটেরা বাহিনী মাছ লুটের ধরণ পাল্টেছে। এবার পার্শবর্তী বিলের বৈধ বাসায় অবস্থান করে প্রভাবশালীরা রাতের আধারে লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করছে। হাকালুকির হাওরখাল বিলে প্রভাবশালী মহলের তান্ডবে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
জানা গেছে, ৫ মার্চ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত হাকালুকির হাওরখাল বদ্ধ বিলে অভিযান চালায়। এসময় ফেঞ্চুগঞ্জের প্রভাবশালী নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান, আব্দুর রাজ্জাক রজাই, জলিল শাহ ও ইসলামপুরের জাফর বাহিনীর নিয়োজিত ১১ মৎস্যজীবিকে আটক করা হয়। বিলের পারে তাদের নির্মিত অবৈধ বাসা ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর প্রভাবশালীরা হাওরের মাছ লুটের ধরণ পাল্টে নতুল কৌশল অবলম্বন করছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের অভিযানের পর হাওরখাল বিলের অবৈধ মাছ শিকারীদের প্রশ্রয় দিয়েছে জলা বিলের ইজারাদাররা। তাদের বাসায় মাছ লুটেরা বাহিনী আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিন আছরের আজানের পর পরই জলা বিলে মাছ আহরনে নিয়োজিত ১০-১২টি নৌকা ও জাল নিয়ে সরকারী মৎস্য দস্যুরা হাওরখাল বিলে ঢুকে পড়ে। ভোর পর্যন্ত ৫-১০ লাখ টাকার মাছ শিকার করে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার, ঘিলাছড়া, কানুনগোবাজার, বিয়ানীবাজার, মাইজগাও, কাজীরবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। হাকালুকির হাওরখাল বিলে প্রভাবশালী মহলের তান্ডবে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বছর কয়েক আগে প্রভাবশালী আব্দুর রাজ্জাক রজাই নিযোজিত বাহিনী হাকালুকির ফুটবিল পাহারা দিচ্ছিল। এসময় কুলাউড়া উপজেলার সাদিপুর গ্রামের জনৈক ব্যক্তি নৌকা যোগে বিল অতিক্রমকালে নির্বিচারে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ২০ মে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় হাকালুকির পলোভাঙ্গা বিলে স্থানীয় কিছু সৌখিন মানুষ মাছ ধরতে যায়। এসময় প্রভাবশালী নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান ইজারাদার না হয়েও নির্বিচারে তাদের ওপর গুলি চালান। এতে সুজিত বিশ্বাস নামে তালিমপুরের এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত হন খোঠাউরা গ্রামের ময়না মিয়া, আব্দুল মনাফ, হাশিম উদ্দিন, জইন উদ্দিন, তাজ উদ্দিন, দুলু মিয়া, ওয়াতির আলী, খোকন বিশ্বাস, বিন্দু বিশ্বাস, শালিক আহমদ, আসমান উদ্দিন, কাছিম আলীসহ অন্তত ৩০ ব্যক্তি।
হাকালুকির বিভিন্ন বিলে বছরের পর বছর ধরে নুরুল ইসলাম, রজাই, জাফর বাহিনী প্রমূখ তান্ডব চালালেও অস্ত্রের ঝনঝনানির কারণে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। আর এ সুযোগেই তারা হাকালুকির বিভিন্ন বিলের কোটি কোটি টাকার মাছ লুটপাট করছে।
সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন জানান, হাওরখাল বিলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পর নতুল কৌশলে মাছ চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাচ্ছেন। তবে এব্যাপারে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন