৬ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস

December 5, 2018,

বিকুল চক্রবর্তী॥ শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাটি পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল। তবে এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কুমুদ রঞ্জন দেব বলেন, ১৯৭১সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ৫ ডিসেম্ব^র পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে হত্যা করেছিল অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষদের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সূচিত অসহযোগ আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে তীব্র রূপ নেয়। অফিস-আদালতসহ শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছিল। শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগান এলাকায় বধ্যভূমিতে ৪৭ জন চা শ্রমিককে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেছিল পাক-হানাদার বাহিনী। ভাড়াউড়া চা বাগানে কলেজ রোডস্থ সেখানে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সৌধ আজও তার স্বাক্ষী বহন করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সমরু জানান, শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের ওয়াপদার অফিসের পিছনে একটি ছড়ায় ও বর্তমান বিজিবি সেক্টরের সাধু বাবার বটতলা খ্যাত (বর্তমান নামকরন বধ্যভূমি-৭১), সিন্দুর খান জয়বাংলা বধ্যভুমি, পূর্বাশা বধ্যভুমিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ও অর্জুন দাসসহ বহু বীর সেনানীকে।

পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শ্রীমঙ্গলে বীর মুক্তিযোদ্ধা  সমীর সোম  ও মুকিত লস্করসহ একে একে শহীদ আনিস মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা মইনউদ্দিন, শম্ভু ভূমিজ, আব্দুস শহীদ, সুখময় পাল, শহীদ সুদর্শন, আলতাফুর রহমান আরোও  অনেকেই। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মরনপন লড়াই ও ভারতের সীমান্ত থেকে মুক্তি বাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাক বাহিনী ভীত হয়ে পড়ে। অবস্থার বেগতিক দেখে ৬ ডিসেন্বর ভোরে তারা পালিয়ে মৌলভীবাজারে আশ্রয় নেয় এবং মুক্ত হয় শ্রীমঙ্গল শহর। উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলে সাধু বাবার থলীর (অর্থাৎ বিজিবি ক্যাম্পের পাশে) ২০১০ই সালের ১০ ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি-৭১ নামের একটি স্মৃতিস্তম্ব।

এদিকে ডিসেম্বর মাস জুরে প্রতিবছর বধ্যভূমিতে মুক্তিযোদ্ধের আলোক চিত্র ও স্মারক প্রদর্শন করেন বিকুল চক্রবর্তী। এই প্রদশর্নীতে উঠে আসে এতদ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও বধ্যভুমির তথ্য ও শহীদ পরিবারের বর্তমান অবস্থার কথা।

বিকুল চক্রবর্তী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে ও শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে শ্রীমঙ্গলের বধ্যভূমি-৭১ প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের একটি যাদুঘর করা হলে তরুন প্রজন্ম এখানকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com