সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে রোজা/ঈদ পালন উচিৎ কি-না?

July 1, 2013,

সৌদি আরবের সাথে মিলানোর জন্য চাঁদ না দেখে রোজা বা ঈদ পালন শরিয়তে মোহাম্মদীর দৃষ্টিতে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আল্লাহর হাবীব (দঃ) বলেছেন: لا تصوموا حتى تراى الهلال অর্থাৎ, যতক্ষন নবচন্দ্র না দেখবে ততক্ষন রোজা রাখবেনা (সহি বূখারী)। প্রায় সারে চৌদ্দশত বৎসর যাবৎ আল্লাহর রাসূল (দঃ) থেকে শুরু করে কোন সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈন, ফকিহ্, মুজতাহিদ্, মোজাদ্দেদ ও আউলিয়াকেরাম কেহই এরুপ অন্য দেশের সাথে মিলানোর জন্য চাঁদ না দেখে রোজা ও ঈদ পালন করেননি। বরং প্রিয় নবীজি (দঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন’ এবং তাবেঈগণ ‘রহিমাহুমুল্লাহ’ এর আকিদা ও আমল হচ্ছে: *ইমাম কুরতবী (রঃ) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন:فان قرب فالحكم واحد وان بعد فلاهل كل بلد رؤيتهم روي هذا عن عكرمة والقاسم وسالم وروي عن ابن عباس وبه قال اسحاق واليه اشار البخارى حيث بوب “لاهل كل بلد رؤيتهم” অর্থাৎ, যদি নিকটবর্তী অঞ্চল হয় তাহলে চাঁদ দেখার হুকুম এক, কিন্তু যদি দূরবর্তী হয় তাহলে প্রত্যেক দেশে চাঁদ দেখা শর্ত, আর ইহা বর্ণনা করেছেন হজরত ইকরামা (রাঃ), হজরত কাসিম (রাঃ) ও সালিম (রাঃ) আরোও বর্ণনা করেছেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে, এরই সাথে হজরত ইসহাক্ব (রঃ) বলেন: এদিকে ইশারা করেই ইমাম বূখারী ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ বলেছেন: “প্রত্যেক দেশের অধিবাসীগণ চাঁদ দেখবে” (তাফছিরে কুরতবী শরীফ, ২য় জি: ২৬৩ পৃ:)। *আল্লামা ইমাম বগভী (রঃ) ও আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী এ মর্মে বর্ণনা করেন: فذهب كثير منهم الي لكل اهل بلد رؤيتهم واليه ذهب من التابعين القاسم بن محمد وسالم بن عبد الله بن عمر وعكرمة.. অর্থাৎ, অধিকাংশ ফকিহ্গণ ইহা গ্রহন করেছেন যে, নিজ নিজ দেশে চাঁদ দেখতে হবে। এই মত গ্রহন করেছেন তাবেঈগণ ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন’। যেমন কাশেম ইবনে মুহাম্মদ (রাঃ), ছালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ), হজরত ইকরিমা (রাঃ).. (শরহু সুন্নাহ, ৪র্থ খন্ড, ১৪৫ পৃ:; মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫১ পৃ:)। ইমাম বগবী (রঃ) ৪৫০ হিজরীর দিকে অর্থাৎ, প্রায় ১ হাজার বছর পূর্বে এই ফতোয়া দিয়েছেন। সুতরাং প্রিয় নবীজির সাহাবীগণ থেকে যারা এলেম অর্জন করেছেন ঐ সকল তাবেঈগণের আমল ও অধিকাংশ ফকিহ্গণের আমল আমাদের গ্রহণ করা উচিৎ নয় কি? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেন: يسئونك عن الاهلة قل هى مواقت للناس অর্থ: লোকেরা আপনাকে একাধিক নবচন্দ্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলুন! ইহা মানুষের (একাধিক) সময় নির্বাচনের জন্য (সূরা বাকারা, ১৮৯ নং আয়াত)। আমরা সবাই জানি, আকাশে নবচন্দ্র দেখা যায় একটি, যাকে আরবীতে ‘হেলাল’ বলা হয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ‘হেলাল’ এর বহুবচন ‘আহিল্লাহ’ বা একাধিক নবচন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যদি এক জায়গায় চাঁদ দেখা বিশ্বের সবার জন্য যথেষ্ঠ হত, তাহলে এই আয়াতে ‘হেলাল’ এর বহুবচন ‘আহিল্লাহ’ তথা একাধিক নব চন্দ্রের কথা ব্যবহার করা হত না। *এ ব্যাপারে একটি সহি হাদিস উল্লেখ করছি: عن كريب ان ام فضل بنت الحارث بعثته الى معاوية بالشام قال قدمت الشام فقضيت حاجتها فرايت الهلال ليلة الجمعة ثم قدمت المدينة فى اخر الشهر فسانى عبد الله ابن عباس ثم ذكر الهلال فقال متى رايتم الهلال؟ فقلت رايناه ليلة الجمعة فقال انت رايته؟ قلت نعم وراه الناس وصاموا وصام معاوية فقال لكنا رايناه ليلة السبت فلا نزال نصوم حتى نكمل ثلاثين او نراه فقلت اولا تكتفي برؤية معاوية وصيامه؟ قال:لا, هكذا امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم *অর্থাৎ,“হজরত কুরাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, উম্মে ফজল (রাঃ) তাঁকে শাম দেশে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। কুরাইব (রাঃ) বলেন: আমি সিরিয়ায় পৌছে উম্মে ফজলের কাজ সমাধান করলাম। সিরিয়া থাকতে থাকতেই রমদ্বানের চাঁদ দেখা গেল। জুময়ার রাতে আমরা চাঁদ দেখলাম। এরপর রমদ্বানের শেষে আমি মদিনায় ফিরলাম। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করার পর চাঁদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, জুময়ার রাতে। তিনি বললেন, তুমি নিজে জুময়ার রাতে চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ আমি দেখেছি ও লোকেরা দেখেছে এবং তাঁরা রোজা রেখেছে হজরত মোয়াবিয়া (রাঃ) রোজা রেখেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, কিন্তু আমরা মদিনায় চাঁদ দেখেছি শনিবার রাতে। কাজেই আমরা পুনরায় চাঁদ দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করব নতুবা ত্রিশ দিন পূর্ণ করব। আমি বললাম, আপনি কি মুয়াবিয়া (রাঃ) এর চাঁদ দেখা ও রোজা রাখাকে যথেষ্ঠ বিবেচনা করেন না? তিনি বললেন, না। আমাদেরকে আল্লাহর রাসূল (দঃ) এরুপ’ই আদেশ দিয়েছেন (সহি মুসলীম শরীফ, ১ম খন্ড, ৩৪৮ পৃ:; সহি তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: ১৪৮ পৃ:; সুনানে নাসাঈ শরীফ, ১ম জি: ২৩০ পৃ:; সহি আবু দাউদ শরীফ, ১ম জি: ৩১৯ পৃ:; দারে কুতনী শরীফ, ৩য় খন্ড, ১২৭ পৃ:; বজলুল মাজহুদ, ১১তম জি: ৭৩ পৃ:; সুনানে কুবরা লিল বায়হাক্বী, ৪র্থ খন্ড, ৬৩০ পৃ:; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, ২য় খন্ড, ৬৮ পৃ:; ফাতহুল মুলহীম শরহে মুসলীম; শরহে ফাতহুল কাদির, ২য় খন্ড, ৩১৯ পৃ:; ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ খন্ড, ১৫৩ পৃ:; মুসনাদে আহমদ; তাফছিরে কুরতবী শরীফ, ২য় জি: ২৬৩ পৃ:)। সকল ইমামের মতে ইহা সহি হাদিস। রাসূলে পাক (দঃ) এর হাদিস দ্বারা সরাসরি প্রমান হয়, দূরবর্তী অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলেও নিজ দেশে চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা/ঈদ পালন করা যাবেনা। এটাই আল্লাহর রাসূল (দঃ) এর নির্দেশ। *এই হাদিস উল্লেখ করে ইমাম তিরমিজি (রঃ) বলেন:والعمل هذا الحديث عند اهل العلم لكل اهل بلد رؤيتهم অর্থাৎ, “প্রত্যেক দেশে চাঁদ দেখে রোজা ও ঈদ পালনের ব্যাপারে আহ্লে ইলিমগণ এই হাদিসের উপর আমল করেছেন”(সহি তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: ১৪৯ পৃ:; মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫৩ পৃ:)। স্বীয় দেশে চাঁদ দেখে রোজা/ঈদ পালনের আমল সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ ও ফকিহ্-মুজতাহিদ্গণের আমলে পাওয়া যায়, কিন্তু এর বিপরীত আমল পাওয়া যায় না। যদি এর বিপরীত আমল কেউ করতেন তাহলে ইমাম তিরমিজি (রঃ) ইহা উল্লেখ করতেন। *ছিহা ছিত্তার অন্যতম কিতাব সুনানে নাসাঈ শরীফের হাশিয়ায় উল্লেখ রয়েছে:فلا يلزم الصوم برؤته اهل بلد على اهل بلد اخر لكن حجة انما هى فى المرفوع من الروية ابن عباس অর্থাৎ,“এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে আমল যোগ্য নয়, কেননা এই ব্যাপারে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত মরফূ রেওয়াত দলিল হিসেবে রয়েছে” (সুনানে নাসাঈ শরীফ, ১ম জি: ২৩১ পৃ:)। *অষ্টম শতাব্দির মোজাদ্দেদ, শারিহে বূখারী, আল্লামা ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রাঃ) উল্লেখ করেন:لاهل كل بلد رؤيتهم وفى صحيح مسلم من حديث ابن عباس ما يشهد له অর্থাৎ, প্রত্যেক দেশের অধিবাসীরা তাদের নিজস্য চাঁদ দেখার উপর আমল করবে, এ ব্যাপারে সহি মুসলীমে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস সাক্ষ্য রয়েছে (ফাতহুল বারী শরহে বূখারী, ৪র্থ খন্ড, ১৫৩ পৃ:)। *আল্লামা ইমাম কুরতবী (রঃ) বলেন:فهو حجة على ان البلاد اذا تباعدت كتباعد الشام من الحجاز فالواجب على اهل كل بلد ان تعمل على رؤيته بدون رؤية غيره অর্থাৎ, যদি শহর দূরবর্তী হয় যেমন হিজাজ থেকে শামের দূরত্ব তখন অন্য দেশের চাঁদ দেখা বাদ দিয়ে নিজ দেশে চাঁদ দেখে আমল করা তাদের জন্য ওয়াজিব, আর এই হাদিস ইহার উপরই হুজ্জত বা দলিল (তাফছিরে কুরতবী শরীফ, ২য় জি: ২৬৪ পৃ:)। সুতরাং ইমাম কুরতবী (রঃ) এর ফতোয়া দ্বারা স্পষ্ট প্রমান হয়, হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কতৃক বর্ণিত হাদিস স্বীয় দেশে চাঁদ দেখে আমল করার হুজ্জত বা দলিল এবং এরুপ আমল করা ওয়াজিব, দূরবর্তী দেশের চাঁদ দেখা আমল যোগ্য নয়। *এ ব্যাপারে সহি তিরমিজি শরীফের হাশিয়াতে উল্লেখ রয়েছে:لا يلزم من الرؤيته اهل بلد الصوم على اهل بلد اخر جنا قال ابن عباس: لا, اى لا تكتفي رؤيته معاوية, هكذا امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم অর্থাৎ, “এক দেশে চাঁদ দেখে অন্য দেশে রোজা পালন করা লাজেম বা আবশ্যক নয়, এ দিকে লক্ষ্য করেই ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, মুয়াবিয়ার চাঁদ দেখা আমাদের জন্য যথেষ্ঠ নয়, আর এভাবেই আল্লাহর রাসূল (দঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন” (সহি তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: ১৪৮ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত কিতাব, হেদায়ার শরাহ্ ‘ফাতহুল কাদির’-এ হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদিস খানা উল্লেখ করে লিখেছেন: لا شك ان هذا اولى لانه نص وذلك محتمل لكون المراد امر كل اهل مطلع بالصوم لرؤيتهم অর্থাৎ,“এতে কোন সন্দেহ নেই যে ইহা (নিজ দেশে চাঁদ দেখে রোজা বা ঈদ পালন) অধিক উত্তম, কেননা এটা ‘নছ’ বা শরয়ী দলিল। ইহার মুরাদ বা অর্থ হবে প্রত্যেক ‘আহলে মাতালে’ তথা প্রত্যেক দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখবেন (ফাতহুল কাদির, ২য় খন্ড, ৩১৯ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের অন্যতম ফকিহ্, আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী উল্লেখ করেন:حكم اللزوم فى البلاد المتقاربة كالبصرة والبغداد دون المتباعدة كالاندليس وخراسن অর্থাৎ, নিকটবর্তী দেশসমূহের নবচন্দ্র দেখে রোজা বা ঈদ লাজেম হবে, যেমন: বছরা ও বাগদাদ। তবে দূরবর্তী দেশসমূহ ব্যতীত, যেমন: ইন্দালিস ও খুরাশান (মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫২ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের মশহুর কিতাব, ফতোয়ায়ে শামীর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে:والتقارب لايختلف باختلاف مطالع الكواكب كبغداد والكوفة لان مطلع هؤلاء هو مطلع هؤلاء فاذا راى الهلال اهل بغداد ولم يره اهل الاكوفة وجب الصوم على اهل الكوفة ولا عبرة بعدم رؤيتهم الهلال অর্থাৎ, নিকটবর্তী অঞ্চলে চাঁদ উদয়ের কোন ভিন্নতা হবেনা, যেমন বাগদাদ ও কুফা। কেননা সেখানে যখন (চাঁদ) উদয় হয় তখন এখানেও উদয় হবে। তাই যখন বাগদাদের লোকেরা চাঁদ দেখবে কিন্তু কুফার লোকেরা চাঁদ দেখবেনা, তখন কুফা বাসীর উপর রোজা রাখা ওয়াজিব। আর দূরবর্তীদের চাঁদ দেখার ব্যাপারে (নিকটবর্তীদের) শিক্ষনীয় নেই (ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ৩৬৩ পৃ:)। বিশ্ব নন্দিত মোজাদ্দেদ, আল্লামা আহমদ রেজা খান বেরলভী (রঃ) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন: “যব এক শহর ওয়ালনে চান্দ দেখা’তু কিয়া হর শহর ওয়ালপর রোজা লাজিম হুগা? ইছমে মাশাইখ কি এখতেলাফ হায়। বায়াজনে কাহা ইছে রোজা রাজিম নেহী, হর শহর ওয়ালকি হক্বমে উনকি আপকে রুইয়হি মু’তবর হায়। খানিয়ামে হায় জাহিরুর রেওয়াতকি মোতাবিক এখতেলাফেল মাতালে কা এতেবার নেহী, আওর কুদুরীমে হায় যব দুনু শহরওকে দরমিয়ান এতনা তাফাওত হ জিসসে মাতালে’মে এখতেলাফ নাহ ত লাজেম হুগা, শামছুম আইম্মা হালওয়ানীনে জিকির কিয়া হামারে মাজহাবমে এহি ছহি হায় অর্থাৎ, যখন একটি শহরে চাঁদ দেখা যাবে তখনকি সকলের জন্য রোজা আবশ্যক হবে? এই মাসালায় ইমামগণের মতানৈক্য আছে। অনেকে বলেছেন: রোজা আবশ্যক হবেনা, প্রত্যেক শহরের জন্য নিজস্য চাঁদ দেখা হক্ব। খানিয়াতে আছে জাহিরুর রেওয়াত মোতাবেক এখতেলাফুল মাতালে মুতাবর নয়। আবার কুদুরীতে (তাজরীদে) আছে: যদি দুটি শহরের মাঝে এমন দূরত্ব হয় যে, চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা হয়না তাহলে রোজা লাজেম বা আবশ্যক হবে (ফতোয়ায়ে রেজভীয়া, কিতাবুস সাওম; মজমুয়াউল ফাতওয়া)। *প্রখ্যাত দেওবন্দী আলিম, আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের ছাত্র, মুফ্তী রশিদ আহমদ লুদিয়ানভী সাহেব বলেন: “বান্দানে মাছয়ালায়ে ইখতেলাফে মাতালে ইনফেরাদান ওয়া ইজতেমান বারেহা আউরকিয়া হর মরতবা এহি নতিজা নিকলা ইন্দাল আহনাফ বেলাদে ব’ইদামে বিহি এখতেলাফে মাতলা গায়রে ম’তাবর হায় আওর এহি কওল মুফতাবি হায়” অর্থাৎ, লেখক বলেন: আমি ইখতেলাফে মাতালে এর মাছায়ালা গভীরভাবে বার বার চিন্তা করে দেখেছি হানাফীদের কাছে দূরবর্তী অঞ্চলে চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা গায়রে মু’তাবর বা গ্রহনযোগ্য নয়, আর এই কথার উপরই ফতোয়া হয়েছে (আহছানুল ফতোয়া, ৪র্থ খন্ড, ৪২৬ পৃ:)। সুতরাং হানাফী মাজহাবের দৃষ্টিতে দূরবর্তী অঞ্চলে চাঁদ উদয়ের দিকে লক্ষ্য করে আমল করা যাবেনা, যতক্ষন নিজ দেশে চাঁদ না দেখা যাবে। আর এই মাছায়ালার হানাফী মাজহাবের উপর ফতোয়া হয়েছে। *ফাদ্বিলাতুল উস্তাজ, আল্লামা শফিকুর রহমান নদভী হানাফী উল্লেখ করেন:اذا ثبتت رؤية الهلال بقطر من الاقطار لزم الصوم على سائر الاقطار التى تجاوره وتتحد به فى المطلع অর্থাৎ, যখন কোন উদয়াচলে বা শহরে চাঁদ উদিত হওয়া প্রমানিত হবে, তখন ঐ এলাকার সকল অঞ্চলের বা সকল শহরের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। যারা ঐ শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলের লোক, এবং চাঁদ উদয়ের স্থানের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ (আল ফিকহুল মিচ্ছারুন, ২০১ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের চুড়ান্ত ফতোয়ার কিতাব, ‘কিতাবুল বাদাউছ ছানায়ে’ উল্লেখ রয়েছে:اذا كانت المسافة بين البلد تين قريبة لا تختلف فيها المطالع فاما اذا كانت بعيدة فلا يلزم احدالبلدين حكم اخر অর্থাৎ,“যখন দু’টি দেশের মধ্যে দূরত্ব খুব নিকটবর্তী হবে তখন চাঁদ উদয়ের কোন মতবিরুধ থাকবে না। আর যখন দূরবর্তী কোন দেশ হবে তখন এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশের জন্যে লাজেম বা আবশ্যক হবে না” (কিতাবুল বাদাউছ ছানায়ে, ২য় খন্ড, ২২৪ পৃ:; মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫২ পৃ:)। এটা’ই হানাফী মাজহাবের চুড়ান্ত ফতোয়া। সুতরাং সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্যে অনেক দূরবর্তী দেশ, তাই ঐ দেশের চাঁদ দেখা বাংলাদেশের মুসলমানের আমলের জন্য আবশ্যক নয়। এটাই উলামায়ে আহনাফের চুড়ান্ত ফতোয়া। *বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশনের উলামা ও ফোকাহাদের অভিমত: “যে সকল স্থানে চাঁদ একদিনে উদিত হওয়া সম্ভব সেখানে চাঁদ দেখা প্রমানিত হলে সে এলাকার সব লোকের তা অনুসরণ করতে হবে, তবে এমন দূরাঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর তা প্রযোজ্য হবেনা যেখানে সেদিন চাঁদ দেখা বাস্তবিক পক্ষে সম্ভব নয়” (ই: ফা: থেকে প্রকাশিত ‘দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম’ ৩০৪ পৃ:; ফতোয়ায়ে আলমগীরি, ১ম খন্ড, ২০৭ পৃ:)। বাংলাদেশ সরকারের হেলাল কমিটি তথা চাঁদ দেখা কমিটির অবস্থানঃ- বাংলাদেশের যে কোন এক শহরে নবচন্দ্র দেখা গেলে এবং ইহা হেলাল কমিটির কাছে প্রমানিত হলে, সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রোজা বা ঈদ পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে নিচের দলিলটি লক্ষ্য করুনঃ- يلزم الرؤية بلد اهل البلاد ك&#16
সৌদি আরবের সাথে মিলানোর জন্য চাঁদ না দেখে রোজা বা ঈদ পালন শরিয়তে মোহাম্মদীর দৃষ্টিতে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আল্লাহর হাবীব (দঃ) বলেছেন: لا تصوموا حتى تراى الهلال অর্থাৎ, যতক্ষন নবচন্দ্র না দেখবে ততক্ষন রোজা রাখবেনা (সহি বূখারী)। প্রায় সারে চৌদ্দশত বৎসর যাবৎ আল্লাহর রাসূল (দঃ) থেকে শুরু করে কোন সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈন, ফকিহ্, মুজতাহিদ্, মোজাদ্দেদ ও আউলিয়াকেরাম কেহই এরুপ অন্য দেশের সাথে মিলানোর জন্য চাঁদ না দেখে রোজা ও ঈদ পালন করেননি। বরং প্রিয় নবীজি (দঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন’ এবং তাবেঈগণ ‘রহিমাহুমুল্লাহ’ এর আকিদা ও আমল হচ্ছে: *ইমাম কুরতবী (রঃ) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন:فان قرب فالحكم واحد وان بعد فلاهل كل بلد رؤيتهم روي هذا عن عكرمة والقاسم وسالم وروي عن ابن عباس وبه قال اسحاق واليه اشار البخارى حيث بوب “لاهل كل بلد رؤيتهم” অর্থাৎ, যদি নিকটবর্তী অঞ্চল হয় তাহলে চাঁদ দেখার হুকুম এক, কিন্তু যদি দূরবর্তী হয় তাহলে প্রত্যেক দেশে চাঁদ দেখা শর্ত, আর ইহা বর্ণনা করেছেন হজরত ইকরামা (রাঃ), হজরত কাসিম (রাঃ) ও সালিম (রাঃ) আরোও বর্ণনা করেছেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে, এরই সাথে হজরত ইসহাক্ব (রঃ) বলেন: এদিকে ইশারা করেই ইমাম বূখারী ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ বলেছেন: “প্রত্যেক দেশের অধিবাসীগণ চাঁদ দেখবে” (তাফছিরে কুরতবী শরীফ, ২য় জি: ২৬৩ পৃ:)। *আল্লামা ইমাম বগভী (রঃ) ও আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী এ মর্মে বর্ণনা করেন: فذهب كثير منهم الي لكل اهل بلد رؤيتهم واليه ذهب من التابعين القاسم بن محمد وسالم بن عبد الله بن عمر وعكرمة.. অর্থাৎ, অধিকাংশ ফকিহ্গণ ইহা গ্রহন করেছেন যে, নিজ নিজ দেশে চাঁদ দেখতে হবে। এই মত গ্রহন করেছেন তাবেঈগণ ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন’। যেমন কাশেম ইবনে মুহাম্মদ (রাঃ), ছালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ), হজরত ইকরিমা (রাঃ).. (শরহু সুন্নাহ, ৪র্থ খন্ড, ১৪৫ পৃ:; মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫১ পৃ:)। ইমাম বগবী (রঃ) ৪৫০ হিজরীর দিকে অর্থাৎ, প্রায় ১ হাজার বছর পূর্বে এই ফতোয়া দিয়েছেন। সুতরাং প্রিয় নবীজির সাহাবীগণ থেকে যারা এলেম অর্জন করেছেন ঐ সকল তাবেঈগণের আমল ও অধিকাংশ ফকিহ্গণের আমল আমাদের গ্রহণ করা উচিৎ নয় কি? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেন: يسئونك عن الاهلة قل هى مواقت للناس অর্থ: লোকেরা আপনাকে একাধিক নবচন্দ্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলুন! ইহা মানুষের (একাধিক) সময় নির্বাচনের জন্য (সূরা বাকারা, ১৮৯ নং আয়াত)। আমরা সবাই জানি, আকাশে নবচন্দ্র দেখা যায় একটি, যাকে আরবীতে ‘হেলাল’ বলা হয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ‘হেলাল’ এর বহুবচন ‘আহিল্লাহ’ বা একাধিক নবচন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যদি এক জায়গায় চাঁদ দেখা বিশ্বের সবার জন্য যথেষ্ঠ হত, তাহলে এই আয়াতে ‘হেলাল’ এর বহুবচন ‘আহিল্লাহ’ তথা একাধিক নব চন্দ্রের কথা ব্যবহার করা হত না। *এ ব্যাপারে একটি সহি হাদিস উল্লেখ করছি: عن كريب ان ام فضل بنت الحارث بعثته الى معاوية بالشام قال قدمت الشام فقضيت حاجتها فرايت الهلال ليلة الجمعة ثم قدمت المدينة فى اخر الشهر فسانى عبد الله ابن عباس ثم ذكر الهلال فقال متى رايتم الهلال؟ فقلت رايناه ليلة الجمعة فقال انت رايته؟ قلت نعم وراه الناس وصاموا وصام معاوية فقال لكنا رايناه ليلة السبت فلا نزال نصوم حتى نكمل ثلاثين او نراه فقلت اولا تكتفي برؤية معاوية وصيامه؟ قال:لا, هكذا امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم *অর্থাৎ,“হজরত কুরাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, উম্মে ফজল (রাঃ) তাঁকে শাম দেশে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। কুরাইব (রাঃ) বলেন: আমি সিরিয়ায় পৌছে উম্মে ফজলের কাজ সমাধান করলাম। সিরিয়া থাকতে থাকতেই রমদ্বানের চাঁদ দেখা গেল। জুময়ার রাতে আমরা চাঁদ দেখলাম। এরপর রমদ্বানের শেষে আমি মদিনায় ফিরলাম। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করার পর চাঁদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, জুময়ার রাতে। তিনি বললেন, তুমি নিজে জুময়ার রাতে চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ আমি দেখেছি ও লোকেরা দেখেছে এবং তাঁরা রোজা রেখেছে হজরত মোয়াবিয়া (রাঃ) রোজা রেখেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, কিন্তু আমরা মদিনায় চাঁদ দেখেছি শনিবার রাতে। কাজেই আমরা পুনরায় চাঁদ দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করব নতুবা ত্রিশ দিন পূর্ণ করব। আমি বললাম, আপনি কি মুয়াবিয়া (রাঃ) এর চাঁদ দেখা ও রোজা রাখাকে যথেষ্ঠ বিবেচনা করেন না? তিনি বললেন, না। আমাদেরকে আল্লাহর রাসূল (দঃ) এরুপ’ই আদেশ দিয়েছেন (সহি মুসলীম শরীফ, ১ম খন্ড, ৩৪৮ পৃ:; সহি তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: ১৪৮ পৃ:; সুনানে নাসাঈ শরীফ, ১ম জি: ২৩০ পৃ:; সহি আবু দাউদ শরীফ, ১ম জি: ৩১৯ পৃ:; দারে কুতনী শরীফ, ৩য় খন্ড, ১২৭ পৃ:; বজলুল মাজহুদ, ১১তম জি: ৭৩ পৃ:; সুনানে কুবরা লিল বায়হাক্বী, ৪র্থ খন্ড, ৬৩০ পৃ:; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, ২য় খন্ড, ৬৮ পৃ:; ফাতহুল মুলহীম শরহে মুসলীম; শরহে ফাতহুল কাদির, ২য় খন্ড, ৩১৯ পৃ:; ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ খন্ড, ১৫৩ পৃ:; মুসনাদে আহমদ; তাফছিরে কুরতবী শরীফ, ২য় জি: ২৬৩ পৃ:)। সকল ইমামের মতে ইহা সহি হাদিস। রাসূলে পাক (দঃ) এর হাদিস দ্বারা সরাসরি প্রমান হয়, দূরবর্তী অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলেও নিজ দেশে চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা/ঈদ পালন করা যাবেনা। এটাই আল্লাহর রাসূল (দঃ) এর নির্দেশ। *এই হাদিস উল্লেখ করে ইমাম তিরমিজি (রঃ) বলেন:والعمل هذا الحديث عند اهل العلم لكل اهل بلد رؤيتهم অর্থাৎ, “প্রত্যেক দেশে চাঁদ দেখে রোজা ও ঈদ পালনের ব্যাপারে আহ্লে ইলিমগণ এই হাদিসের উপর আমল করেছেন”(সহি তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: ১৪৯ পৃ:; মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫৩ পৃ:)। স্বীয় দেশে চাঁদ দেখে রোজা/ঈদ পালনের আমল সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ ও ফকিহ্-মুজতাহিদ্গণের আমলে পাওয়া যায়, কিন্তু এর বিপরীত আমল পাওয়া যায় না। যদি এর বিপরীত আমল কেউ করতেন তাহলে ইমাম তিরমিজি (রঃ) ইহা উল্লেখ করতেন। *ছিহা ছিত্তার অন্যতম কিতাব সুনানে নাসাঈ শরীফের হাশিয়ায় উল্লেখ রয়েছে:فلا يلزم الصوم برؤته اهل بلد على اهل بلد اخر لكن حجة انما هى فى المرفوع من الروية ابن عباس অর্থাৎ,“এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে আমল যোগ্য নয়, কেননা এই ব্যাপারে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত মরফূ রেওয়াত দলিল হিসেবে রয়েছে” (সুনানে নাসাঈ শরীফ, ১ম জি: ২৩১ পৃ:)। *অষ্টম শতাব্দির মোজাদ্দেদ, শারিহে বূখারী, আল্লামা ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রাঃ) উল্লেখ করেন:لاهل كل بلد رؤيتهم وفى صحيح مسلم من حديث ابن عباس ما يشهد له অর্থাৎ, প্রত্যেক দেশের অধিবাসীরা তাদের নিজস্য চাঁদ দেখার উপর আমল করবে, এ ব্যাপারে সহি মুসলীমে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস সাক্ষ্য রয়েছে (ফাতহুল বারী শরহে বূখারী, ৪র্থ খন্ড, ১৫৩ পৃ:)। *আল্লামা ইমাম কুরতবী (রঃ) বলেন:فهو حجة على ان البلاد اذا تباعدت كتباعد الشام من الحجاز فالواجب على اهل كل بلد ان تعمل على رؤيته بدون رؤية غيره অর্থাৎ, যদি শহর দূরবর্তী হয় যেমন হিজাজ থেকে শামের দূরত্ব তখন অন্য দেশের চাঁদ দেখা বাদ দিয়ে নিজ দেশে চাঁদ দেখে আমল করা তাদের জন্য ওয়াজিব, আর এই হাদিস ইহার উপরই হুজ্জত বা দলিল (তাফছিরে কুরতবী শরীফ, ২য় জি: ২৬৪ পৃ:)। সুতরাং ইমাম কুরতবী (রঃ) এর ফতোয়া দ্বারা স্পষ্ট প্রমান হয়, হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কতৃক বর্ণিত হাদিস স্বীয় দেশে চাঁদ দেখে আমল করার হুজ্জত বা দলিল এবং এরুপ আমল করা ওয়াজিব, দূরবর্তী দেশের চাঁদ দেখা আমল যোগ্য নয়। *এ ব্যাপারে সহি তিরমিজি শরীফের হাশিয়াতে উল্লেখ রয়েছে:لا يلزم من الرؤيته اهل بلد الصوم على اهل بلد اخر جنا قال ابن عباس: لا, اى لا تكتفي رؤيته معاوية, هكذا امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم অর্থাৎ, “এক দেশে চাঁদ দেখে অন্য দেশে রোজা পালন করা লাজেম বা আবশ্যক নয়, এ দিকে লক্ষ্য করেই ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, মুয়াবিয়ার চাঁদ দেখা আমাদের জন্য যথেষ্ঠ নয়, আর এভাবেই আল্লাহর রাসূল (দঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন” (সহি তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: ১৪৮ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত কিতাব, হেদায়ার শরাহ্ ‘ফাতহুল কাদির’-এ হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদিস খানা উল্লেখ করে লিখেছেন: لا شك ان هذا اولى لانه نص وذلك محتمل لكون المراد امر كل اهل مطلع بالصوم لرؤيتهم অর্থাৎ,“এতে কোন সন্দেহ নেই যে ইহা (নিজ দেশে চাঁদ দেখে রোজা বা ঈদ পালন) অধিক উত্তম, কেননা এটা ‘নছ’ বা শরয়ী দলিল। ইহার মুরাদ বা অর্থ হবে প্রত্যেক ‘আহলে মাতালে’ তথা প্রত্যেক দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখবেন (ফাতহুল কাদির, ২য় খন্ড, ৩১৯ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের অন্যতম ফকিহ্, আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী উল্লেখ করেন:حكم اللزوم فى البلاد المتقاربة كالبصرة والبغداد دون المتباعدة كالاندليس وخراسن অর্থাৎ, নিকটবর্তী দেশসমূহের নবচন্দ্র দেখে রোজা বা ঈদ লাজেম হবে, যেমন: বছরা ও বাগদাদ। তবে দূরবর্তী দেশসমূহ ব্যতীত, যেমন: ইন্দালিস ও খুরাশান (মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫২ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের মশহুর কিতাব, ফতোয়ায়ে শামীর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে:والتقارب لايختلف باختلاف مطالع الكواكب كبغداد والكوفة لان مطلع هؤلاء هو مطلع هؤلاء فاذا راى الهلال اهل بغداد ولم يره اهل الاكوفة وجب الصوم على اهل الكوفة ولا عبرة بعدم رؤيتهم الهلال অর্থাৎ, নিকটবর্তী অঞ্চলে চাঁদ উদয়ের কোন ভিন্নতা হবেনা, যেমন বাগদাদ ও কুফা। কেননা সেখানে যখন (চাঁদ) উদয় হয় তখন এখানেও উদয় হবে। তাই যখন বাগদাদের লোকেরা চাঁদ দেখবে কিন্তু কুফার লোকেরা চাঁদ দেখবেনা, তখন কুফা বাসীর উপর রোজা রাখা ওয়াজিব। আর দূরবর্তীদের চাঁদ দেখার ব্যাপারে (নিকটবর্তীদের) শিক্ষনীয় নেই (ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ৩৬৩ পৃ:)। বিশ্ব নন্দিত মোজাদ্দেদ, আল্লামা আহমদ রেজা খান বেরলভী (রঃ) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন: “যব এক শহর ওয়ালনে চান্দ দেখা’তু কিয়া হর শহর ওয়ালপর রোজা লাজিম হুগা? ইছমে মাশাইখ কি এখতেলাফ হায়। বায়াজনে কাহা ইছে রোজা রাজিম নেহী, হর শহর ওয়ালকি হক্বমে উনকি আপকে রুইয়হি মু’তবর হায়। খানিয়ামে হায় জাহিরুর রেওয়াতকি মোতাবিক এখতেলাফেল মাতালে কা এতেবার নেহী, আওর কুদুরীমে হায় যব দুনু শহরওকে দরমিয়ান এতনা তাফাওত হ জিসসে মাতালে’মে এখতেলাফ নাহ ত লাজেম হুগা, শামছুম আইম্মা হালওয়ানীনে জিকির কিয়া হামারে মাজহাবমে এহি ছহি হায় অর্থাৎ, যখন একটি শহরে চাঁদ দেখা যাবে তখনকি সকলের জন্য রোজা আবশ্যক হবে? এই মাসালায় ইমামগণের মতানৈক্য আছে। অনেকে বলেছেন: রোজা আবশ্যক হবেনা, প্রত্যেক শহরের জন্য নিজস্য চাঁদ দেখা হক্ব। খানিয়াতে আছে জাহিরুর রেওয়াত মোতাবেক এখতেলাফুল মাতালে মুতাবর নয়। আবার কুদুরীতে (তাজরীদে) আছে: যদি দুটি শহরের মাঝে এমন দূরত্ব হয় যে, চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা হয়না তাহলে রোজা লাজেম বা আবশ্যক হবে (ফতোয়ায়ে রেজভীয়া, কিতাবুস সাওম; মজমুয়াউল ফাতওয়া)। *প্রখ্যাত দেওবন্দী আলিম, আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের ছাত্র, মুফ্তী রশিদ আহমদ লুদিয়ানভী সাহেব বলেন: “বান্দানে মাছয়ালায়ে ইখতেলাফে মাতালে ইনফেরাদান ওয়া ইজতেমান বারেহা আউরকিয়া হর মরতবা এহি নতিজা নিকলা ইন্দাল আহনাফ বেলাদে ব’ইদামে বিহি এখতেলাফে মাতলা গায়রে ম’তাবর হায় আওর এহি কওল মুফতাবি হায়” অর্থাৎ, লেখক বলেন: আমি ইখতেলাফে মাতালে এর মাছায়ালা গভীরভাবে বার বার চিন্তা করে দেখেছি হানাফীদের কাছে দূরবর্তী অঞ্চলে চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা গায়রে মু’তাবর বা গ্রহনযোগ্য নয়, আর এই কথার উপরই ফতোয়া হয়েছে (আহছানুল ফতোয়া, ৪র্থ খন্ড, ৪২৬ পৃ:)। সুতরাং হানাফী মাজহাবের দৃষ্টিতে দূরবর্তী অঞ্চলে চাঁদ উদয়ের দিকে লক্ষ্য করে আমল করা যাবেনা, যতক্ষন নিজ দেশে চাঁদ না দেখা যাবে। আর এই মাছায়ালার হানাফী মাজহাবের উপর ফতোয়া হয়েছে। *ফাদ্বিলাতুল উস্তাজ, আল্লামা শফিকুর রহমান নদভী হানাফী উল্লেখ করেন:اذا ثبتت رؤية الهلال بقطر من الاقطار لزم الصوم على سائر الاقطار التى تجاوره وتتحد به فى المطلع অর্থাৎ, যখন কোন উদয়াচলে বা শহরে চাঁদ উদিত হওয়া প্রমানিত হবে, তখন ঐ এলাকার সকল অঞ্চলের বা সকল শহরের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। যারা ঐ শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলের লোক, এবং চাঁদ উদয়ের স্থানের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ (আল ফিকহুল মিচ্ছারুন, ২০১ পৃ:)। *হানাফী মাজহাবের চুড়ান্ত ফতোয়ার কিতাব, ‘কিতাবুল বাদাউছ ছানায়ে’ উল্লেখ রয়েছে:اذا كانت المسافة بين البلد تين قريبة لا تختلف فيها المطالع فاما اذا كانت بعيدة فلا يلزم احدالبلدين حكم اخر অর্থাৎ,“যখন দু’টি দেশের মধ্যে দূরত্ব খুব নিকটবর্তী হবে তখন চাঁদ উদয়ের কোন মতবিরুধ থাকবে না। আর যখন দূরবর্তী কোন দেশ হবে তখন এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশের জন্যে লাজেম বা আবশ্যক হবে না” (কিতাবুল বাদাউছ ছানায়ে, ২য় খন্ড, ২২৪ পৃ:; মাআরিফুস সুনান, ৫ম খন্ড, ৩৫২ পৃ:)। এটা’ই হানাফী মাজহাবের চুড়ান্ত ফতোয়া। সুতরাং সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্যে অনেক দূরবর্তী দেশ, তাই ঐ দেশের চাঁদ দেখা বাংলাদেশের মুসলমানের আমলের জন্য আবশ্যক নয়। এটাই উলামায়ে আহনাফের চুড়ান্ত ফতোয়া। *বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশনের উলামা ও ফোকাহাদের অভিমত: “যে সকল স্থানে চাঁদ একদিনে উদিত হওয়া সম্ভব সেখানে চাঁদ দেখা প্রমানিত হলে সে এলাকার সব লোকের তা অনুসরণ করতে হবে, তবে এমন দূরাঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর তা প্রযোজ্য হবেনা যেখানে সেদিন চাঁদ দেখা বাস্তবিক পক্ষে সম্ভব নয়” (ই: ফা: থেকে প্রকাশিত ‘দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম’ ৩০৪ পৃ:; ফতোয়ায়ে আলমগীরি, ১ম খন্ড, ২০৭ পৃ:)। বাংলাদেশ সরকারের হেলাল কমিটি তথা চাঁদ দেখা কমিটির অবস্থানঃ- বাংলাদেশের যে কোন এক শহরে নবচন্দ্র দেখা গেলে এবং ইহা হেলাল কমিটির কাছে প্রমানিত হলে, সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রোজা বা ঈদ পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে নিচের দলিলটি লক্ষ্য করুনঃ- يلزم الرؤية بلد اهل البلاد ك&#16 মুফ্তী মাওলানা আলাউদ্দিন জেহাদী

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com