ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য পুনরায় শেখ হাসিনার সরকারের প্রয়োজনীয়তা : সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ ও নিঃস্বার্থভাবে আওয়ামীলীগের পক্ষে ভোট আহবান

December 9, 2018,

রুহুল আমীন রুহেল॥ বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ইতিমধ্যে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করেছে। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামীলীগ ছাড়াও দেশ ও জোটের স্বার্থে স্বাধীনতার পক্ষের দলগুলো থেকে অনেকেই নৌকার মনোয়ন পেয়েছেন। গ্রাম হবে শহর স্লোগানকে সামনে রেখে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিবেকবান সবাই আজ একজোট। স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু যে উচ্চতায় নিতে চেয়েছিলেন সেটা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি দেশ বিরোধী লোভীরা। দীর্ঘ দিন পর অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ নতুন উচ্চতায়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচিত করে যাচ্ছেন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। বাংলাদেশ মানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ মানে শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ মানে আওয়ামী লীগ, আর সেই বাংলাদেশ মানে উন্নয়নের প্রতিক নৌকা। নৌকার জয় শেখ হাসিনার জয়, নৌকার জয় বাংলাদেশের জয় ভেবেই ভোট দিতে হবে, ভোট চাইতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এযাবতকালে বাংলাদেশে যত সরকার এসেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী, অনুকরণীয়, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি সফলতার প্রমান রেখেছেন বাংলাদেশের সবর্ক্ষেত্রে।
গত ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার সাফল্যের সাথে দেশ পরিচালনা করেছে সেটা নিশ্চিন্তে বলা যায়। ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত দুই মেয়াদে ১০ বছরের শাসনামলে দেশে উন্নয়ন হয়েছে ২০ লাখ কোটি টাকারও বেশি যা স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় রেকর্ড। পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পগুলোর মতো বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এই ১০ বছরের মধ্যেই।
উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ যা আজ দৃশ্যমান। যেই দেশের পক্ষ নিলেছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭১ সালে, যারা আজও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তাদের দেশকে ত্যাগ করা বাংলাদেশের জন্য ভূল ছিল; সেই পাকিস্তানকেও বাংলাদেশ পিছনে ফেলেছে প্রায় সর্বক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, বৈদেশিক শ্রমবাজার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জননিরাপত্তা, সামাজিক বৈষম্য নিরসনসহ প্রায় সব সূচকেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়েছে গেছে বাংলাদেশ। অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, অন্তর্ভূতিমূলক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ অনেকটাই পেছনে ফেলেছে ভারত ও পাকিস্তানকে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান৬২, পাকিস্তানের ৫২ ও শ্রীলঙ্কার ৪০। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সাফল্যে বাংলাদেশ বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায়। ২০১৭ – ১৮ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ( ২০১৬ – ১৭ ) চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৫ – ১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘর (৭ দশমিক ১১) অতিক্রম করে। পরপর তিন বছর ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির অর্জনের নজিরও সাম্প্রতিক বিশ্বে বিরল।
আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের তথ্য মতে, জিডিপির আকার অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ২০১০ সালে বাংলাদেশের এই অবস্থান ছিল ৫৮তম। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে নয় বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে ১৫ ধাপ। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় জীবনযাত্রার মান বেড়েছে বাংলাদেশের। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যেখানে ছিল ৭১০ ডলার সেখানে আজ ২০১৮ সালে হয়েছে ১৭৫২ ডলার! ২০০৯ সালে রপ্তানী আয় যেখানে ছিল ১.২৬ বিলিয়ন ডলার সেখানে ২০১৮ সালে রপ্তানী আয় হল ৪১.১ বিলিয়ন ডলার! এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে ১০ বছরে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ দেশ পরিচালনার কারনেই আজ বাংলাদেশের এই চলমান অগ্রযাত্রা।
আগামি ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশ ও দেশের মানুষ এবং উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করতে হবে। সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে মানুষের কর্মসংস্থান, দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে প্রভাব পড়ে। শেখ হাসিনা সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় দেশে এখন ধারাবাহিক উন্নয়ন হচ্ছে। গ্রামগুলো ক্রমশ শহরে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো, মানবসম্পদসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি এমনই ত্বরান্বিত হয়েছে যে, বিশ্ববাসী এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে মনে করে। বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা প্রয়োজন। নতুবা উন্নয়ন মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে জনগণ যদি উন্নয়নের পক্ষে রায় প্রদান করেন, তাহলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। ধারাবাহিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য গ্রামে-গঞ্জে, ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে হবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতাদের। সাধারণ প্রচার বা নির্বাচনী প্রচারের পুরোনো রীতি পরিবর্তন করতে উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে গিয়ে বলতে হবে সময় নিয়ে। দেশের উন্নয়নে ও জনগণের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেসব কর্মসূচি নিয়েছি, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাদের নৌকা প্রতিক দিয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। এক আসনে অনেক নেতা আছেন যারা যোগ্যতা রাখেন সংসদ সদস্য হবার। কিন্ত মনোয়ন পেয়েছেন একজন। আর মনোয়ন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। দল, দেশ ও সফল সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য নৌকার মনোয়ন পেয়েছেন যারা তাদের নিয়ে এগুতে হবে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে। দেশের উন্নয়নের জন্য, মানব উন্নয়নের জন্য ত্যাগটা হোক নির্ভেজাল। এবারের নির্বাচন হোক আওয়ামীলীগের জন্য, শেখ হাসিনার জন্য, নৌকার জন্য। জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা।
লেখকঃ রুহুল আমিন রুহেল যুগ্ন-সম্পাদক, গ্রেটার ম্যানচেষ্টার আওয়ামীলীগ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com