মৌলভীবাজার পৌরসভার উদ্যোগ গভীরতা বাড়ছে কুদালী ছড়ার

ইমাদ উদ দীন॥ দীর্ঘ দিন থেকে মূমুর্ষ কুদালী ছড়ার প্রাণ ফিরে ছিল গেল বছর। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্ধ না থাকাসহ নানা কারনেই পুরোপুরি গভীরতা পেয়ে ¯্রােত্বসী হতে পারেনী ছড়াটি। তবে ওই যাত্রায় নিজের গতি পথ আর অবস্থান জানান দিতে পেরেছিল। এ সময় ছড়াটি আপন গতি পথ ফিরে পেয়ে তার উপকারীতা ও প্রয়োজনীতায় নিজের আস্থা অর্জনে অনেকটাই সক্ষম হতে পেরেছে। গেল বছরের প্রথমার্ধে শুষ্ক মৌসুমে সংস্কার কাজ করায় বর্ষা মৌসুমে পাওয়া যায় চমকপ্রদ সুফলতা।
শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা মাছি সৃষ্টি না হওয়া,শহরের বাহিরের অংশের আশপাশের কৃষিক্ষেতে পানি নিষ্কাসন,জলাবদ্ধতায় লেগে থাকা কচুরীপানা না জমা ও কৃষিজমিতে সেচ সহায়তা পাওয়ায় ছড়াটির উপকারভোগীরাও বেজায় খুশি। তবে ছড়া পাড়ের কিছু বাসাবাড়ির লোকজন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা ময়লা আর্বজনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে ছড়াটিতে ফেলায় তা দ্রুত ভরাট হচ্ছে। শুধু এমন অসচেতন ভাবে ময়লা আর্বজনা ছড়াটিতে ফেলায় বছরের সংস্কার করা অনেক জায়গাই আবারো ভরাট হয়ে যায়। এছাড়াও নানা কারনে নাব্যতা হ্রাস ও আয়তন কমে যাওয়ায় পুরোপুরি নিজের ঐতিহ্য জানান দিতে পারছেনা ছড়াটি। এই দূর্দশা থেকে উদ্ধারে পৌরসভার উদ্যোগে পুনরায় শুরু হয়েছে খনন কাজ। শুরু হওয়া এই খনন কাজটি পৌর কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে নিজেই তদারকি করছেন পৌর মেয়র। শুরু হওয়া কাজটি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল। শহরের জলবদ্ধতা রোধে দ্রুত পানি নিস্কাশনের অন্যতম গতিপথ ও কৃষিক্ষেতের সুফলতা ধরে রাখতে কুদালী ছড়ার গভীরতা বাড়াতে এবছরও দ্বিতীয় বারের মত শুরু হয়েছে এ খনন কাজ। ১২ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বিকেল থেকে শহরের টিভি হাসপাতাল সড়ক এলাকা থেকে কোদালী ছড়া পুন:খনন কাজের যাত্রা শুরু হয়। শহরের পূর্ব গীর্জাপাড়া ফাটাবিল এলাকায় এক্রকাভেটর দিয়ে চলছে এ খনন কাজ। বর্ষা মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত চলবে এ খনন কাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন তাদের বর্ষা ও শুষ্ক উভয় মৌসুমে তাদের এলাকায় জলাবদ্ধতা লেগেই থাকত। কিন্তু গেল বছর থেকে তাদের এই সমস্যা অনেকটাই লাগব হয়েছে। গেল বছর ছড়াটি সংস্কারে তেমন একটা জলাবদ্ধতায় তাদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়নি। এবছর আবারো খনন কাজ শুরু হয়েছে তাই জলাবদ্ধতার দূর্ভোগ আর পড়তে হবেনাএমনটিই প্রত্যাশা তাদের। জানা গেল ২০১৮ সালের প্রথম দিকে অস্তিত্ব সংকটে থাকা ঐতিহ্যবাহী কুদালী ছড়া রক্ষায় উদ্যোগী হয় মৌলভীবাজার পৌরসভা। তখন স্থানীয় জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করতে পৌরসভার উদ্যোগে হয় একাধিক সভা,সেমিনার ও বৈঠক। মৌলভীবাজার শহর দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র ছড়া হল কুদালী ছড়া। নানা কারনে দীর্ঘদিন থেকে সংস্কারহীনতায় ছড়াটি পড়েছিল বেহাল দশায়। ছড়াটি দেখতে ছোট হলেও কাজের চাপ নদীর মতই। কিন্তু তার কদর কিংবা যতœ ছিল না বিন্দু মাত্র। ছোট্ট ছড়াটির উপর বড় ধকল। বেদখল,নাব্য হ্রাস আর ময়লা আর্বজনায় ছড়াটি পড়ে মূমুর্ষ অবস্থায়। জন্ম থেকে না হলেও পরবর্তীতে মানুষের অযাচিত অত্যাচারে এমনটিই যেন ছড়াটির নিয়তি। জানা যায় ছড়াটি বর্ষিজোড়া পাহাড় থেকে শুরু হয়ে শহর ও গ্রাম দিয়ে বয়ে হাইল হাওরেই শেষ।
নাব্য হ্রাস আর দু’তীরে অবৈদ দখল দারিত্বে বিলীন হতে চলেছিল কুদালি ছড়া। আর এ কারনেই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় শহরবাসীদের ছিল অসহ্যনীয় দূর্ভোগ। ছড়াটির এমন আতœহনন রোধে উদ্যোগি হন মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র। পৌরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় জেলা প্রশাসনও। তাদের যৌথ উদ্যোগে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কুদালী ছড়া রক্ষায় নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে হয় বৈঠক। জেলা প্রশাসকের হল রুমে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সম্মিলিত সিন্ধান্ত আসে ১০ ফেব্রুয়ারি স্বেচ্ছা শ্রমে কুদালী ছড়া খননের। এমন সিন্ধাতে অনুপ্রাণিত হন স্থানীয় বাসিন্দারা। সকলেই কোদালী ছড়া বাঁচাতে স্বেচ্ছা শ্রমে অংশ নিতে আগ্রহী হন। ওই দিন পৌরসভার আওতাধীন প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশে কুদালী ছড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় স্বর্তস্ফুর্ত অংশ নেন সহ¯্রাধিক মানুষ। জানা যায় কুদালী ছড়ার দৈর্ঘ ১৭ কিলোমিটার। পৌরসভা ছাড়াও ৩টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম দিয়েও প্রবাহিত হচ্ছে ছড়াটি। সে কারনে ছড়াটি শহর বাসির জন্য যে শুধু জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন এমনটি নয়। গ্রামের কৃষিজীবী মানুষেরও জীবনের অনুসঙ্গ। তাই ছড়াটি কৃষিজীবী মানুষের ধান ও মৌসুমী সবজি চাষের জন্য পানির অন্যতম উৎস। আর তার স্বচ্ছ মিঠা পানির জলাধার দেশীয় প্রজাতি মাছের নিরাপদ আবাসস্থল। স্থানীয় উপকারভোগীদের জোরদাবি ও প্রত্যাশা কুদালী ছড়া আগের মতই হবে গ্রাম ও শহর বাসীর আর্শিবাদ। তবে সে জন্য ভরাট হওয়া কুদালি ছড়ার পুরো ১৭ কিলোমিটারই খননের জোর দাবী তাদের।
ছড়াটির উপকার ভোগী অনেকেই জানান আগে একাধীক বার কুদালী ছড়া খননের নাম করে প্রকল্পের পুরো টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে খনন কাজ শুরু কারায় তারা আনন্দিত। পৌরসভা সুত্রে জানা যায় কুদালী ছড়াকে আগের রুপে ফিরিয়ে নিতে বেশ কিছু পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপটি তারা বেশ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। প্রথম ধাপটি ছিল ছড়া রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা। ২য় ধাপ হচ্ছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও খননকাজ। ৩য় ধাপ হল ছড়ার দু’পাশ চিহ্নিত করে তা রক্ষায় সংরক্ষণ প্রাচীর (গাইড ওয়াল) নির্মাণ করা। ৪র্থ ধাপে রয়েছে ছড়ার পাশ দিয়ে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে নিরাপদ পা হাটার পথ (ওয়াক ওয়ে) তৈরী করা। তাছাড়া স্থায়ী ভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি ছড়াটির দু’তীরের মানুষকে অনাবাদি কৃষিজমি চাষাবাদ,খাঁচায় মাছ চাষ ও হাঁস পালনের কর্মক্ষেত সৃষ্টি করে দেওয়া। পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বলেন গেল বছর ছড়াটির সংস্কার কাজে উপকৃত হয়েছে শহর ও গ্রামের মানুষ। তবে নাব্য হ্রাসে ছড়াটি প্রাণচাঞ্চল্য হচ্ছে না। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র পথই হচ্ছে এই ছড়া। একসময়ের স্বচ্ছ ও ¯্রােতস্বিনী ছড়াটির নেই সেই ঐতিহ্য। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই শহরে বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লাতে জলাবদ্ধতা দেখা দিত। সংস্কার হওয়াতে গেল বছর থেকে আমরা এর সুফলতা পাচ্ছি। জলবদ্ধতাও থাকছেনা ক্ষেতকৃষিও হচ্ছে। আমাদের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। তবে কুদালী ছড়ার প্রাণ রক্ষায় সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতার প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন